আজ ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ভিডিও বার্তায় যা বললেন তামিম


অনলাইন ডেস্ক

ক’দিন আগেও ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক। সেই তামিম ইকবালের কণ্ঠ ভার। প্রায়ই কান্না এলো, লুকিয়ে রাখলেন বেশ কষ্টে। ১২ মিনিটের ভিডিওতে তামিম জানালেন, কেন তিনি নেই বিশ্বকাপ দলে। সেটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…..

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। গলায় ইনফেকশন হয়েছে, পরিষ্কারভাবে বলতে পারছি না। স্ট্যাটাস দেখেই বুঝতে পেরেছেন, শেষ কয়েক দিনে যা যা লেখা হয়েছে আর আসলে যা ঘটেছে—পুরোপুরি আলাদা। যা যা ঘটেছে, পুরো জিনিসটাই ধাপে ধাপে আপনাদের জানাই। কারণ এটি আমার যারা ভক্ত ও বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমি তাদের জানা উচিত।

বেসিক্যালি সবাই জানেন, আমি অবসরে যাই, অবসরে যাওয়ার কারণ ছিল। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ফিরে আসি। এরপর যে দুই মাস আমি প্রচণ্ড পরিমাণ কষ্ট করি নিজেকে ফিট করার জন্য। আমি নিশ্চিত, যারা সম্পৃক্ত ছিল, ফিজিও থেকে শুরু করে। আমি নিশ্চিত সবাই একমত হবেন, এমন কোনো সেশন বা ব্যয়াম নেই যেটি তারা চেয়েছেন কিন্তু আমি করি নাই।

খেলা শুরু হওয়ার আগে যখন কাছাকাছি আসল, আমি মানসিকভাবে খুশি ছিলাম না। নিজের জীবনের সঙ্গে রিলেট করলে বুঝতে পারবেন, এটা সহজ না। প্রথম ম্যাচে ৩০-৩৫ ওভার ফিল্ডিং করলাম, ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাইনি দুর্ভাগ্যবশত। পরের ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ এলো। আমার জন্য যেটা সম্ভাব্য সেরা আউটকাম দরকার ছিল, দুর্ভাগ্যবশত ম্যাচটা আমরা হেরে যাই। তবে ওই সময় আমার দরকার ছিল কিছুটা রান করা, ব্যাটিংটা কেমন হচ্ছে অনুভব করা। যেভাবে ব্যাটিং করেছি তাতে অনেক খুশি ছিলাম। আমি মাত্র ৪৪ রান করেছি, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম বড় কিছুর জন্য। তবে সেটি হয়নি দুর্ভাগ্যজনকভাবে। সে ম্যাচের পর আমি মানসিক দিক দিয়ে খুশি ছিলাম। যা শেষ ৪-৫ মাস হয়েছে, সেগুলো মাথায় অতটা ছিল না সেভাবে। খেলতে মুখিয়ে ছিলাম আবার, বিশ্বকাপ খেলতে মুখিয়ে ছিলাম।

স্বাভাবিকভাবেই এত দিন পর যখন ক্রিকেট খেলবেন, চোট থেকে সেরে উঠেছেন, ব্যথা অস্বস্তি থাকবেই। প্রথম ম্যাচের পরও ব্যথা অনুভব করেছি। যখন খেলা শেষ হলো, আমার অবস্থান ফিজিওকে বললাম যে আমার অবস্থা কী। ঠিক ওই মুহূর্তে তিনজন নির্বাচক ড্রেসিংরুমে আসেন। একটা জিনিস পরিষ্কার করতে চাই, আমি কোনো সময়, কোনো মুহূর্তে কাউকে কোনো সময় বলি নাই আমি পাঁচটা ম্যাচের বেশি খেলতে পারবো না। আমি নিশ্চিত, গতকাল নান্নু ভাইও পরিষ্কার করেছে এটা। এটা মিথ্যা কথা, ভুল কথা। আমি জানি না এটা মিডিয়ায় কীভাবে ফিট করা হয়েছে বা কে করেছে। এটা একেবারে ভুল। যেটা নির্বাচকদের বলেছিলাম, আমার শরীর এখন এমনই থাকবে। ব্যথা থাকবে। দল যখন নির্বাচন করবেন, এটা মাথায় রেখে করবেন। এটার কারণ আছে।

কারণ, আপনারা যদি কিছুদিন আগের কথা চিন্তা করেন, অধিনায়ক ছিলাম, যে ম্যাচের পর অবসর নেই, একটা কথা ছিল, ফিজিও ও কোচ মিলে কথা বলেছিলাম। তিনজন সম্মত হয়েছিলাম যে আমার খেলা উচিত। এরপর আপনারা জানেন যে কেমন ধরনের কথা মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ফিট না থাকলে খেলা উচিত না। অবাক লাগছে কারণ ওই রুমে সবাই সম্মতি দিয়েছিল। আমি আরেকটি বিতর্ক তৈরি করতে চাইনি। পুরোপুরি সৎ থেকে আমার তরফ থেকে নির্বাচকদের বলেছি, আপনারা মাথায় রেখে নির্বাচন করিয়েন। এমন হতে পারে, ৯ ম্যাচ খেলি সমস্যা ছাড়া। বিশ্বকাপের সূচি এমন ছিল, প্রতি ম্যাচের পরই ৩-৪ দিনের গ্যাপ আছে, প্রথম দুটি ম্যাচ ছাড়া।

যে কোনো সুস্থ মানুষের সঙ্গেও হতে পারে, দুটি ম্যাচ খেলার পর ইনজুরড হলো, এরপর দেশে পাঠিয়ে দিলেন। বিকল্প নিতে পারেন। এ কারণে আমি এ জিনিসটা পরিষ্কার বলি। বলার পর যখন হোটেলে যাই, আমাকে অ্যাসেস করে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটা, যেটা ফিজিওর রিপোর্টে ছিল। একদম যে কথাটা ছিল, আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করি। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করতে চায়, তাদের স্বাগত জানাই। পাবলিক ফোরামে বসেন, বলেন যে আমি ভুল করেছি।

ফিজিওর রিপোর্ট যেটা ছিল, আমার কন্ডিশনটা বলা হয়েছিল। প্রথম ম্যাচের পর এমন ব্যথা হয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচের পর এমন ব্যথা হয়েছে। আর আজকের দিন হিসাবে ২৬ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ খেলতে পারবো। তবে মেডিকেল বিভাগ মনে করে যদি আমি বিশ্রাম নিই, ২৬ তারিখ আমাদের অনুশীলন ছিল, ২৭ তারিখ আমাদের ট্রাভেলিং ছিল, ২৮ তারিখ আমাদের একটা প্রস্তুতি ম্যাচ। তারপর এক-দুই তারিখে আরেকটি প্রস্তুতি ম্যাচ। আমি যদি এখন বিশ্রাম নিই, আমি যদি দ্বিতীয় প্র্যাকটিস ম্যাচটা খেলি তাহলে পর্যাপ্ত সময় পাবো। পুনর্বাসনও হয়ে যাবে সবমিলিয়ে ১০ সপ্তাহের পুনর্বাসন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে প্রথম ম্যাচটা খেলার জন্য খুব ভালো অবস্থায় থাকব।

কোনো জায়গায় বলা হয়নি পাঁচ ম্যাচ-দুই ম্যাচ, ইনজুরি, খেলতে পারব না এতকিছু। হ্যাঁ আমার শরীরে ব্যথা ছিল যেটা অস্বীকার করছি না। বেসিক্যালি এটা হয়েছে। তারপর যেটা ঘটেছে, আমার কাছে যেটা মনে হয় মিডিয়াতে যেটা আসতেছে ইনজুরি, দুই ম্যাচ, পাঁচ ম্যাচ এই সেই। আমার কাছে মনে হয় না বিশ্বকাপে না যাওয়ার পেছনে এটার বড় অবদান ছিল। কারণ আমি যেহেতু ইনজুরড হইনি এখনো, ব্যাথা থাকতে পারে কিন্তু ইনজুরড হইনি এখনো।

আরও পড়ুন: তামিম দলে থাকতে চাননি: মাশরাফি

তার দুই-একদিন পর আমাকে বোর্ডের টপ লেভেল থেকে একজন ফোন করলেন। উনি বেশ জড়িত আমাদের ক্রিকেটে। আমাকে হঠাৎ করে ফোন করে বললেন তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না, আফগানিস্তানের সঙ্গে। আমি বললাম ভাই এটা এখনো ১২-১৩ দিনের কথা। আমি তো এর মধ্যে ভালো অবস্থায় থাকবো। কী কারণে খেলবো না? তখন বললেন আচ্ছা তুমি যদি খেলোও আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি তুমি যদি খেলোও তাহলে নিচে ব্যাট করাব।

স্বাভাবিকভাবেই ভাই একটা জিনিস মনে রাখতে হবে আমি কোন মাইন্ডসেট থেকে আসতেছিলাম। হঠাৎ করে একটা ভালো ইনিংস খেলেছি। আমি খুশি ছিলাম। হঠাৎ করে এসব কথা আমার পক্ষে নেওয়া সম্ভব না। আমি ১৭ বছর ধরে এক পজিশনে ব্যাটিং করেছি। জীবনে কোনো দিন তিন-চারে ব্যাটিংই করিনি। এমন যদি হতো আমি তিনে ব্যাটিং করি, চারে ব্যাটিং করি তাহলে যদি ওপর নিচ করা হয় সেটা মানিয়ে নেওয়া যেত। কিন্তু আমার তিনে চারে পাঁচে ব্যাটিংয়ের অভিজ্ঞতা নেই। আমি কথাগুলো ভালোভাবে নিইনি। উত্তেজিত হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ কথাগুলো পছন্দ হয়নি। মনে হচ্ছিল আমাকে জোর করে অনেক জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা আমার মনে হয়েছে। তখন আমি বললাম দেখেন, আপনারা একটা কাজ করেন যদি আপনাদের এমন চিন্তাধারা থাকে তাহলে আপনারা আমাকে পাঠায়েন না। আমি এই নোংরামির মধ্যে থাকতে চাই না। প্রতিদিন আপনারা আমাকে একেকটা নতুন জিনিসের মুখোমুখি করাবেন, আমি এই জিনিসগুলোয় থাকতে চাই না। তারপরও ফোনে উনার সঙ্গে আমার অনেক কথাবার্তা হয়। সেগুলো এই প্লাটফর্মে না বলাই ভালো। এটা আমার আর উনার মধ্যেই থাক। তারপরও বলেছি যদি এগুলো হয় আমাকে রাখিয়েন না। আমি এই নোংরামোর মধ্যে থাকতে পারব না।

আরও পড়ুন: তামিমকে ছাড়া বিশ্বকাপের দল ঘোষণা

সবমিলিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে যে জিনিসটা অনুভব করেছি, মিডিয়াকে আমি জানি না আমি ঠিক বলছি কি বলছি না, কারণ আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে বড় একটা জিনিসকে ঢাকার জন্য আরেকটা জিনিস ঠিক করা। সে পাঁচ ম্যাচ খেলবে তাকে কেমনে দলে নেবো। যেমনটা আমি বলেছি, এটা মিথ্যা। এমন কোনো কথাই হয়নি। আমি নিশ্চিত সেদিন নির্বাচকরা ছিল, ফিজিও ছিল, ট্রেনার ছিল—সবাই ছিল। কী বলেছি সেটা আপনাদের সঙ্গেও পরিষ্কার করেছি। কিন্তু সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হয় যদি আপনি সত্যিই আমাকে চান তাহলে মানসিকভাবে ভালো ও খুশি রাখবেন।

কারণ আমি খুব খারাপ তিন-চার মাস কাটিয়ে এসেছি। আমার জন্য খুব কঠিন ছিল তিন-চার মাস। হয়তো এই কথাই যদি আমাকে অন্যভাবে বলা হতো তাহলে হয়তো আমি বিষয়টি মেনে নিতাম। কিন্তু হঠাৎ করে কেউ যদি ফোন করে বলে খেলিয়েন না, বা বলে যে আচ্ছা যদি খেলেনও আমাদের এমন আলোচনা হচ্ছে নিচে ব্যাটিং করাবে, আমি নিশ্চিত না এটা কতটুকু ন্যায্য। এটাই আসলে ঘটেছে। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই। আমি এতটুকুই বলব আমি নিজের তরফ থেকে যতটুকু অনুভব করেছি, যেটা ঘটেছে সেটা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।

আমি শুভকামনা জানাই যে ১৫ জন বিশ্বকাপে গিয়েছে, তারা যতটুকু সম্ভব বাংলাদেশের জন্য সাফল্য নিয়ে আসবে। আরও অনেক কিছুই ঘটেছে এটা আপনারা দেখেছেন আমি নিশ্চিত। একটা কাহিনী বিচ্ছিন্ন ঘটনা হতে পারে, দুটো কাহিনী ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। কিন্তু একজনের সঙ্গে তিন-চার মাসে যদি সাত-আটটা কাহিনী হয় তাহলে সেটা


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     এই বিভাগের আরও খবর